সুভাষ রায়, গ্রাম : ডালিয়া, উপজেলা : ডিমলা, জেলা : নীলফামারী
প্রশ্ন : পেয়ারার গায়ে ছোট ছোট বাদামি দাগ পড়ে। এছাড়া পরিপক্ব ফল ফেটে যায়। এ অবস্থায় কী করণীয়?
উত্তর : পেয়ারার অ্যানথ্রাকনোজ রোগ হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগ প্রতিরোধে গাছের নিচে ঝড়ে পড়া পাতা, ফল সংগ্রহ করে পুড়ে ফেলা দরকার। আক্রমণ বেশি দেখা দিলে পেয়ারার কুঁড়ি আসার আগে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ছত্রাকনাশক ১ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে ১৫ দিন পর পর ৩ থেকে ৪ বার স্প্রে করলে এ রোগের প্রকোপ কমানো সম্ভব।
মো. সাগর আলী, গ্রাম : পূর্ব শ্যামপুর, উপজেলা : শিবগঞ্জ, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : বরবটির পাতা ও গাছে সাদা পাউডারের মতো দেখা যায়। এছাড়া পাতা হলুদ ও কালো হয়ে মারা যাচ্ছে। এ সমস্যার প্রতিকার কি?
উত্তর : ওইডিয়াম প্রজাতির এক ধরনের ছত্রাকের আক্রমণে এ রোগ হয়ে থাকে। বরবটির এ সমস্যা দূরীকরণে প্রোপিকোনাজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে ভালোভাবে মিশিয়ে রোগাক্রান্ত গাছে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সুফল পাওয়া যাবে। আর এ রোগের আক্রমণ রোধে আগাম বীজ বপন, রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার এবং সুষম সার ব্যবহার করতে হয়।
মো. এনাম উল্লাহ গ্রাম : লাল মোহাম্মদ শিকদারপাড়া, উপজেলা : মহেশখালী, জেলা : কক্সবাজার
প্রশ্ন : নারকেল গাছের কা- ফেটে আঠা বের হচ্ছে। কি করণীয়?
উত্তর : এ সমস্যাটিকে নারকেল গাছের কা-ের ব্লিডিং বলে। রোগের আক্রমণের শুরুতে কা-ে ছোট ছোট ফাটল দেখা যায়। ফাটলগুলো থেকে লালচে বাদামি রঙের রস ঝরে। আস্তে আস্তে গাছ নষ্ট হয়। এ সমস্যা প্রতিকারের জন্য আক্রান্ত স্থান ছুরি বা দা দিয়ে চেঁছে পরিষ্কার করে বর্দোপেস্ট লাগাতে হয় এবং এক লিটার পানিতে ১০০ গ্রাম তুঁত ও ১০০ গ্রাম চুন মিশিয়ে বর্দোপেস্ট তৈরি করতে হয়। বর্দোপেস্ট নারকেল গাছের আক্রান্ত স্থানে বেশ ক’বার লাগালে এ সমস্যাটি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
আব্দুল আহাদ, গ্রাম : খাটুরিয়া, উপজেলা : গোবিন্দগঞ্জ, জেলা: গাইবান্ধা
প্রশ্ন: পাটের কা- কালো হয়ে যাচ্ছে। আক্রান্ত স্থানে হাত লাগলে হাতে কালো দাগ লাগে। কী করব?
উত্তর: পাটের এ সমস্যাটির নাম পাটের কালোপট্টি রোগ। এ রোগ হলে পাটের আক্রান্ত স্থানে হাত দ্বারা ঘসলে হাতে কালো দাগ লেগে যায়। এ রোগে অল্প পরিমাণ পাট গাছ আক্রান্ত হলে সে পাট গাছগুলো অপসারণ করা। আর যদি আক্রমণ বেশি হয়ে যায় তবে মেনকোজেব গ্রুপের ছত্রাকনাশক ২.৫ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করা। এছাড়া জমিতে পানি থাকলে তা নিকাশ করা। এসব বিষয় মেনে চললে আপনি উপকার পাবেন।
মো. সাগর আলী, গ্রাম : পূর্ব শ্যামপুর, উপজেলা : শিবগঞ্জ, জেলা : চাঁপাইনবাবগঞ্জ
প্রশ্ন : গোলাপ ফুল গাছের পাতায় সবুজ হলুদের মিশ্রণ দেখা যাচ্ছে। এছাড়া গোলাপ গাছের পাতাগুলো কোঁকড়ানোও রয়েছে। এমনকি ফুলও ছোট আকারের হয়। কী করণীয়?
উত্তর : গোলাপ গাছে ইয়েলো মোজাইক ভাইরাস আক্রমণ করলে এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। এজন্য ভাইরাস রোগমুক্ত নার্সারি হতে গোলাপের কলম সংগ্রহ করতে হবে। রোগাক্রান্ত গাছ দেখা মাত্র তুলে পুড়ে ফেলতে হবে। বাহক পোকা দমন করার জন্য ইমিডাক্লোরপিড গ্রুপের কীটনাশক ০.৫ মিলি ১ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে। তাহলেই এ সমস্যা থেকে আপনি রেহাই পাবেন।
ঋদ্ধিনন্দন সানা, গ্রাম : বনগ্রাম, উপজেলা : কাউনিয়া, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : পুঁইশাকের পাতায় গোল গোল দাগ হয়। পুরো পাতা নষ্ট হয়ে যায়। ভেতরটা সাদাটে ও দাগের কিনারাটা কালচে হয়। কী করণীয়?
উত্তর : পুঁইশাকে এ সমস্যাটি সারকোস্পোরা নামক ছত্রাকের কারণে হয়ে থাকে। এ রোগটিকে পুঁইশাকের পাতার দাগ রোগ বলে। এ সমস্যা দেখা দিলে প্রতি লিটার পানিতে কার্বেনডাজিম গ্রুপের ১ গ্রাম ছত্রাকনাশক ভালোভাবে মিশিয়ে সঠিক নিয়মে স্প্রে করলে সমস্যার সমাধান হবে। তবে অল্প গাছে এ রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত পাতাগুলো তুলে মাটিতে পুঁতে ফেলা যেতে পারে। এছাড়া সুষম সার ও পরিমিত সেচ প্রদান করলে এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
মো. হাবিবুর রহমান, গ্রাম : শৈলেন, উপজেলা : বিরামপুর, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : আম ফেটে যায়। প্রতি বছরই এমন হচ্ছে। কী করলে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাব?
উত্তর : আম ফেটে যাওয়ার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কারণটি হলো শারীরবৃত্তীয় কারণ। বিশেষ করে আম গাছে পানি সেচ প্রয়োগে সমস্যা হলে এ সমস্যা হয়ে থাকে। এছাড়া গরম ও ঠা-া আবহাওয়ার কারণেও এটি হতে পারে। এ কারণে সময়মতো সেচ ও পরিচর্যার মাধ্যমে এ সমস্যার মোকাবিলা করা যায়।
মো. আনোয়ারুল ইসলাম, গ্রাম : বরকতপুর, উপজেলা : ভুয়াপুর, জেলা: টাঙ্গাইল
প্রশ্ন : পুকুরে চা বীজের খৈল প্রয়োগ করতে চাই। কীভাবে করব?
উত্তর : চা বীজের খৈল প্রয়োগ করে পুকুর থেকে রাক্ষুসে ও অচাষকৃত প্রজাতির মাছ দূর করা যায়। এই খৈল দিয়ে মারা মাছ খাওয়া যায়। এ জন্য প্রতি শতকে প্রতি ৩ ফুট গভীরতার জন্য ৫০০ থেকে ৭০০ গ্রাম চা বীজের খৈল প্রয়োজন হয়। চা বীজের খৈল পানিতে ভিজিয়ে সমস্ত পুকুরের পানিতে সমভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে এবং ২০ থেকে ২৫ মিনিট পর মাছ দ্রুত ধরে ফেলতে হবে।
মো. মাসুম হোসেন, গ্রাম : ভিয়াইল, উপজেলা : চিরির বন্দর, জেলা : দিনাজপুর
প্রশ্ন : পুকুরে জলজ পোকামাকড় দমন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাই।
উত্তর : বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক বা ডিজেল/কেরাসিন প্রয়োগ করে নার্সারি পুকুরের জলজ পোকামাকড় ভালোভাবে দমন করা যায়। এসব হলো- ১. ডিপট্যারেক্স- ৬ থেকে ১২ গ্রাম প্রতি শতক পুকুরে প্রয়োগ করা; ২. সুমিথিয়ন/ নোভান- ২ থেকে ৩ গ্রাম প্রতি শতক পুকুরে প্রয়োগ করা। এসব কীটনাশক ব্যবহারে নিয়ম হলো-প্রয়োজনীয় মাত্রার কীটনাশক একটি পাত্রের মধ্যে ১০ লিটার পরিমাণ পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিঠিয়ে দিতে হবে। ডিপট্যারেক্স প্রয়োগের পর জলজ পোকামাকড় মারা যাওয়া শুরু করলে সমস্ত পোকামাকড় চটজাল দ্বারা তুলে ফেলতে হবে। দুপুর রোদে ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। কম তাপমাত্রা, মেঘ কিংবা বৃষ্টির সময় কীঠনাশক ব্যবহার না করা। এছাড়া কীটনাশক ব্যবহারে যেসব সতর্কতা মেনে চলতে হয় তা হলো- কীটনাশক ব্যহারে সময় ব্যবহারকারীকে নাক, মুখ, শরীর, কাপড় ঢেকে নিয়ে চশমা পরে নিতে হবে; বাতাসের অনুকূলে স্প্রে করা; সমস্ত মরা পোকামাকড় তুলে ফেলতে হবে। এছাড়া ঘন নাইলনের জাল (ঘন পলিস্টার নেট) বার বার টেনেও পোকামাকড় সহনশীল মাত্রায় কমিয়ে আনা যায়। আরেকটি কথা মনে রাখতে হবে সেটি হলো- জলজ পোকামাকড় দমনের সময় উল্লিখিত যে কোনো একটি পদ্ধতি রেণু ছাড়ার ২৪ ঘণ্টা আগে অনুসরণ করতে হবে।
মো. রানা, গ্রাম : দানিশনগর রাজবাড়ী, উপজেলা : পীরগঞ্জ, জেলা : রংপুর
প্রশ্ন : আমার গরুর ১৫ দিন হলো বাচ্চা হয়েছে। বাছুর দুধ পাচ্ছে না। এ অবস্থায় আমি কী করব? পরামর্শ চাই।
উত্তর : গাভীর দুধ বৃদ্ধির জন্য গাভীকে দানাদার খাবার যেমন- গমের ভুষি, চালের কুঁড়া, খেসারি, খৈল এবং খড় খাওয়াতে হবে। এসব খাবারের পাশাপাশি মিল্ক বুস্ট পউডার ও এ মিল্ক ট্যাবলেট খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
মোছা. জাহান আরা, গ্রাম : উজগ্রাম, উপজেলা : গাবতলী, জেলা : বগুড়া
প্রশ্ন : আমার কবুতরের ঘাড় বাঁকা হয়ে থাকে। খাবার খেতে পারে না। এর সমাধান কী?
উত্তর : এটি ভিটামিনের অভাবজনিত একটি রোগ। এই রোগ হলে কবুতরকে বিয়োটিভ দিনে ২ বেলা করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া একটি বোতলে ১০০ থেকে ২০০ গ্রাম ছোলা নিয়ে পানি দিয়ে রাখতে হবে। প্রতিদিন ওই ছোলা বড় কবুতরের ক্ষেত্রে ৪০ থেকে ৫০টা এবং ছোট কবুতরের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ৩০টা করে খাওয়াতে হবে। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে আপনি উপকার পাবেন।
কৃষির যে কোনো প্রশ্নের উত্তর বা সমাধান পেতে বাংলাদেশের যে কোনো জায়গা থেকে যে কোনো মোবাইল থেকে কল করতে পারেন আমাদের কৃষি কল সেন্টারের ১৬১২৩ এ নাম্বারে। শুক্রবার ও সরকারি ছুটির দিন ব্যতীত যে কোনো দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ সময়ের মধ্যে। তাছাড়া কৃষিকথার গ্রাহক হতে বার্ষিক ডাক মাশুলসহ ৫০ টাকা মানি অর্ডারের মাধ্যমে পরিচালক, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫ এ ঠিকানায় পাঠিয়ে ১ বছরের জন্য গ্রাহক হতে পারেন। প্রতি বাংলা মাসের প্রথম দিকে কৃষিকথা পৌঁছে যাবে আপনার ঠিকানায়।
কৃষিবিদ মো. তৌফিক আরেফীন*
*উপ-প্রধান তথ্য অফিসার, কৃষি তথ্য সার্ভিস, খামারবাড়ি, ঢাকা-১২১৫; taufiquedae25@gmail.com